Swarnab Bagchi Silicon Museum
Swarnab Bagchi Silicon Museum
তাতানের স্মৃতি আঁকড়ে মূর্তি বসল ঘরোয়া সংগ্রহশালায়
সঙ্গীতশিল্পী তাতান ঘরে ফিরলেন। পার তবে সিলিকনের মূর্তি হয়ে।
এই ছেলের স্মৃতিতে বাড়িতেই লোকসংস্কৃতির সংগ্রহশালা গড়লেন ন, ঝাড়গ্রামের শিল্পী দম্পতি মানব যে বাগচী এবং স্থিতা পাল বাগচী। মঙ্গলবার ২৩ মে তাতানের জন্মদিনে সর্বসাধারণের জন্য খুলে ত্যু দেওয়া হচ্ছে ওই সংগ্রহশালা। যার, পোশাকি নাম— “তাতানস্ সিলিকন মিউজিয়াম অ্যান্ড জঙ্গলমহল ক্রাফ্ট হাব'। সংগ্রহশালার বিশেষ আকর্ষণ সঙ্গীতশিল্পী স্বার্ণব বাগচী ওরফে তাতানের সিলিকনের মূর্তি। মূর্তিটি তৈরি করেছেন কলকাতার শিল্পী সুবিমল দাস। রক গানের জগতে নতুন প্রজন্মকে স্বার্ণব অবশ্য মাতিয়েছিলেন ‘সাতান তাতান' নামে। পাশাপাশি, গাইতেন লোকসঙ্গীত, নজরুলগীতি- সহ সব ধরনের গান। ঝাড়গ্রামের আদি বাসিন্দা তাতান মাত্র ২৭ বছর বয়সে গত বছর ৮ মে প্রয়াত হন।
তাতানের বাবা মানব বাগচী ঝাড়গ্রামের বিশিষ্ট শিল্পী। মা স্থিতা পাল বাগচী শিক্ষিকা, বাচিকশিল্পী। একমাত্র সস্তানের মৃত্যুতে কার্যত ভেঙে পড়েন বাগচী-দম্পতি। স্থিতা জানালেন, ছেলের জীবন বিমার টাকা পেয়ে মনে হল এমন কিছু করি, যাতে সকলের মাঝে তাতান বেঁচে থাকে। মানব জানালেন, ২০১৬ সালে লেকটাউনের একটি মণ্ডপ ও প্রতিমার কাজ করার সময় বিরাটিতে শিল্পী সুবিমল দাসের স্টুডিয়ো ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছিল তাঁর। মানবের কথায়, "সিলিকনের মূর্তির বিষয়টা অসাধারণ লেগেছিল। ছেলের অকাল প্রয়াণের পর গত বছর যোগাযোগ করি সুবিমলের সঙ্গে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সুবিমল তাতানের সিলিকন মূর্তি গড়ার কাজ শুরু করেন। রবিবার মূর্তিটি বাড়িতে এনেছি। মনে হচ্ছে তাতান আমাদের সঙ্গেই রয়েছে।”
সংগ্রহশালায় ঝাড়গ্রামের লোকসংস্কৃতির নানা বিষয়ের পাশাপাশি থাকছে তাতানের আঁকা ছবি ও হাতের কাজের প্রদর্শনী। এ ছাড়াও তাতানের লেখা কবিতার পাণ্ডুলিপি, মৃত্যুর পর প্রকাশিত তাতানের কবিতা সংকলনও রাখা হচ্ছে। থাকছে মানবের তৈরি বিভিন্ন শিল্পকর্মও। একটি নামী আক্রান্ত হন তাতান।। বেসরকারি সংস্থায় ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি ছেড়ে গানকেই সাধনা ও জীবিকা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তাতান। কলকাতার বিভিন্ন মঞ্চে নিয়মিত অনুষ্ঠান করতেন। কলকাতার বাইরেও অনুষ্ঠানের ডাক আসত। একেবারে নিজস্ব স্টাইলে শব্দচয়ন ও সুর তাতানকে অনন্য স্বীকৃতি এনে দিয়েছিল। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন থিম সংও তৈরি করেছিলেন তাতান। অবসরের প্রিয় শখ ছিল ছবি আঁকা। কবিতাও লিখতেন তাতান। তবে সেগুলি প্রকাশ্যে আসে তাতানের মৃত্যুর পর। ‘সাতান তাতান' নাম ব্যবহার করতেন কেন? বছর চারেক আগে এক সাক্ষাৎকারে তাতান জানিয়েছিলেন, তিনি ডার্ক মিউজিক পছন্দ করেন। অন্ধকারের সঙ্গে ওই সঙ্গীতের সম্পর্ক রয়েছে। তাই নিজেকে শয়তান বা 'সাতান' হিসেবেই জাহির করেন। এমন এক শয়তান, যে গান দিয়েই সমাজের, জীবনের, মানুষের সব অন্ধকার শুষে নিতে চায়। কিন্তু গত বছর আচমকা ‘হেপাটাইটিস সি' আক্রান্ত হন তাতান।
এরপর কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। আপাতত মানব ও স্থিতা চাইছেন, ঘোড়াধরায় তাঁদের বাড়িতে সংগ্রহশালাটি দেখতে আসুন পর্যটকরাও। সন্তানহারা বাবা-মায়ের কথায়, “তাতানের দীর্ঘজীবন হল না, মানুষের মাঝে ও বৃহৎ জীবন নিয়ে বেঁচে থাকুক!”